আমাদের প্রতিবেশী দেশ নিজের সংস্কৃতি ভুলে গিয়ে যে ভুল করেছে সেই একই ভুল আজ আমরাও করছি,( ধর্ষণের রাজধানী দিল্লি / ধর্ষণের শহর দিল্লি! )। তবে আর আমরা কবে সতর্ক হব? আজ আমাদের দেশে নারী নির্যাতন ভয়াবহ পর্যায়ে। তবে কি আমরাও একই পথে হাঁটতে থাকব? নাকি বদলে যাব?
নারী জাতির জন্মই যেন হয়েছে নির্যাতিত হওয়ার জন্য। নারীদের যেন নির্যাতিত হওয়ার জন্যই পাঠানো হয়েছে পৃথিবীতে। প্রতিদিন হাজার হাজার নারী নির্যাতিত হচ্ছেন তাদের নিজ পরিবারে। শুধু ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যেসব নারী নির্যাতিত হয় তাদের খণ্ডচিত্র তুলে ধরা হলো—
৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী।
১০ সেপ্টেম্বর জামালপুরের ইসলামপুরে যৌতুকের দাবিতে শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন এক গৃহবধূ। যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল থেকে প্রেমের টানে জামালপুরের ইসলামপুরে এসে সুখের সংসার বাঁধেন কামরুন নাহার শিল্পী। কিন্তু সুখের সংসার আর ভোগ করা হলো না তার। পাষণ্ড স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদের নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বিষপানে লাশ হয়ে বাবার বাড়ি ফিরতে হলো তাকে।
১২ সেপ্টেম্বর সোমবার পাবনার ঈশ্বরদীতে স্বামী জুয়ার টাকা না পেয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে তার স্ত্রীকে। স্থানীয় সূত্র জানায়, হাতেম আলী প্রতিদিনের মতো শনিবার রাতে জুয়া খেলে গভীর রাতে বাড়ি ফিরে স্ত্রী ববিতা খাতুনের কাছে জুয়া খেলার জন্য আরও টাকা চান। স্ত্রী তাকে টাকা দিতে না চাইলে তাকে বেদম পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে রেখে সে আবার জুয়া খেলতে যায়। ভোরে খেলা শেষে বাড়ি ফিরে স্ত্রীর মৃত্যু দেখে তার মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রকাশের চেষ্টা করে। কিন্তু ময়নাতদন্তে নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। একই দিনে বান্দরবানের লামা উপজেলায় এক গৃহবধূ গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তিন দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও পুলিশ নানা অজুহাত দেখিয়ে মামলা নেয়নি।
নড়াইলের লোহাগড়ায় এক ধর্ষিতা মামলা করায় ধর্ষক ক্ষিপ্ত হয়ে ধর্ষিতার পায়ের রগ কেটে দিয়েছে।
মাদক ব্যবসায়ীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে প্রাণ দিতে হলো সাতক্ষীরার এক তরুণীকে।
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে গণধর্ষণের শিকার এক নারী। কুমিল্লার দাউদকান্দিতে বখাটেদের অস্ত্রের আঘাতে স্কুলছাত্রী ক্ষতবিক্ষত।
১৫ সেপ্টেম্বর যৌতুক না পাওয়ায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় সাজিয়া খাতুন নামের এক গৃহবধূকে হত্যা করা হয়েছে। নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলায় প্রতিবন্ধী এক গৃহবধূ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে রোজি আক্তার নামের দুই সন্তানের জননীকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করা হয়। দফায় দফায় তাকে নির্যাতন করে অনাহারে তিন দিন গৃহবন্দি রাখা হয়। পরে তাকে পুলিশ উদ্ধার করে। রোজি আক্তার জানান, স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে খুশি করার জন্য তাকে দফায় দফায় যৌতুক দিতে হয়েছে। কিন্তু স্বামীর মন ভরাতে পারেনি। পরে প্রতিবাদ করলে তাকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
বাগেরহাট পল্লীতে হতদরিদ্র এক মহিলা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। বিনা মূল্যে ছাগল প্রদানের কথা বলে ডেকে নিয়ে তাকে যৌননিপীড়ন করা হয়।
১৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর বাঘায় এক সেনাসদস্যের বিরুদ্ধে প্রতিবেশী এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া যায়। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে এক বিধবা ধর্ষিত হয় বলে জানা গেছে। ধর্ষণের ঘটনায় প্রভাবশালীরা সালিসের নামে টাকা খেয়ে ধর্ষককে নামেমাত্র জরিমানা করে ছেড়ে দিয়েছে। এদিকে রূপগঞ্জে ধর্ষকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়া হয়।
রাজশাহীর উল্লিখিত সেনাসদস্য কলেজ ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করে এবং পরে মুখে বিষ ঢেলে হত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
২০ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক তরুণীকে ধর্ষণ করেছে এক বখাটে।
সুনামগঞ্জের ছাতকে এক গৃহবধূ গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। বাবা-মাকে ঘরে বেঁধে রেখে বাড়ির বাইরে নির্জন স্থানে নিয়ে আট লম্পট পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে। ময়মনসিংহের গৌরীপুরে চাচার বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ভাড়া করা একদল সন্ত্রাসী বেধড়ক পিটিয়ে স্বামী পরিত্যক্ত এক মহিলার শরীর ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। তার হাত-পা ভেঙে দেয়া হয়েছে।
হবিগঞ্জের মাধবপুরে বখাটেদের উত্পাতে আত্মহননের পথ বেছে নেয় এক কলেজছাত্রী।
২৫ সেপ্টেম্বর যশোরে যৌতুকলোভী স্বামীর পিটুনীতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েও রক্ষা পেল না এক গৃহবধূ। স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক ও মারাধরের দায়ে মামলা করায় হাসপাতালের বেডেই তাকে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত করেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। অন্যদিকে চাঁদপুরের মতলবে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে পানিতে চুবিয়ে মেরেছে আরেক পাষণ্ড। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যৌতুকের দাবিতে এক অন্তঃসত্ত্বাকে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতন চালিয়ে গুরুতর আহত করেছে।
২৬ সেপ্টেম্বর সাভারে এক বখাটের বিরুদ্ধে চাচীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু ধর্ষণই করেনি, মোবাইলে ভিডিও করে বিভিন্ন মোবাইলে ছড়িয়ে দিয়েছে। পটুয়াখালীতে যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীর পা কেটে ফেলেছে এক পাষণ্ড।
২৭ সেপ্টেম্বর বরিশালের আগৈলঝাড়ায় বাসর রাতের দৃশ্য বাজারে ছেড়েছে এক লম্পট শিক্ষক।
কত আশা নিয়ে একটি সংসার বাঁধার আশায় বিশ্বাস করে বিয়ে নামক লিখিত সম্পর্কে আবদ্ধ এক নারী। জীবন-যৌবন তুলে দেয় তার হাতে, কিন্তু সেই পুরুষটাই যখন তাদের মেলামেশার দৃশ্য ভিডিও করে বাজারে ছাড়ে, তখন কী আর করার থাকে তার। তার ওপর পাত্র যদি হয় শিক্ষক, তাহলে তো কথাই নেই।
২৮ সেপ্টেম্বর নিজের পছন্দমত বিয়ে করেও সুখ জোটেনি নবাবগঞ্জের খাদিজার। নিজের পছন্দে বিয়ে করেও তিন মাসের মাথায় যৌতুকের দায়ে তাকে নির্যাতিত হতে হয়। দিনাজপুরের এক নির্যাতিত মহিলাকে সাহায্য করতে গিয়ে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক স্কুল শিক্ষিকা।
২৯ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে যৌতুক এবং পারিবারিক কলহে স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন চার সন্তানের জননী। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক কলেজছাত্রীকে অস্ত্রের মুখে ঘর থেকে তুলে নিয়ে বিবস্ত্র করে ভিডিও চিত্র ধারণ করে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী।
৩০ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় যৌতুকের দাবিতে পিটিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে এক পাষণ্ড স্বামী।
এভাবেই প্রতিদিন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন নারী জাতি। আদিকাল থেকে বর্তমান ডিজিটাল যুগেও কমেনি নারী নির্যাতন, বরং বেড়েছে দ্বিগুণ হারে। শারীরিক-মানসিক দু’ভাবেই নির্যাতিত হয় আমাদের মা-বোনদের। এর কি কোনোদিন সুরাহা হবে না? অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, শিক্ষিত, মহাশিক্ষিত সব পরিবারেই নির্যাতিত হতে হয় নারীদের। শুধু নির্যাতনের ধরনে পার্থক্য, এই যা। এক ডাক্তার মহিলাকে তার বেতনের পুরোটাই তুলে দিতে হয় স্বামীর হাতে। এটা কি এক ধরনের নির্যাতন নয়? স্বামীর মন রাখতে চাকরিও ছেড়ে দিতে হয় অনেক নারীকে। এটা কি এক ধরনের নির্যাতন নয়? ছোটবেলা থেকেই খুব ভালো গান গান সেলিনা, কিন্তু বিয়ের পর তাকে ছেড়ে দিতে হয় গান গাওয়া, হারমোনিয়ামটা পর্যন্ত ভেঙে ফেলে তার স্বামী। এটা কি এক ধরনের নির্যাতন নয়?
নির্যাতন নির্যাতনই, তা শারীরিক বা মানসিক যা-ই হোক। তাই এই নির্যাতন রুখতে দেশে কঠোর আইন প্রণয়ন করা জরুরি। আর আইনের আশ্রয় নিতে গেলে প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দেয়া হয়। এর জন্যও উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা জরুরি।