স্মৃতিশক্তি বাড়াবার জন্য করণীয় কিছু বিষয়!
মেধা মানুষের জন্মগত বৈশিষ্ট্য হলেও এগুলো অক্ষুণ রাখাও মানুষেরই কাজ।
ভাবছেন,কিছুই মনে থাকে না ? স্মৃতিশক্তি কমে? মাথার আর কী দোষ, বয়স তো কম হলো না,কিন্তু একই বয়সী¨জন দিব্যি সব বলে দিতে পারছেন। কেমন করে হলো। আসলে তীক্ষè মেধা মানুষের
জন্মগত বৈশিষ্ট্য হলেও এগুলো অক্ষুণ রাখাও মানুষেরই কাজ। মস্তিষ্কের জন্যও আপনাকে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হবে।
দেহের কোষগুলোতে শক্তি উৎপাদনের জন্য প্রতিনিয়ত সংগঠিত হচ্ছে বিভিন্ন জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়া| মস্তিষ্কের কোষগুলোর কর্মক্ষমতা কমে গেলে স্মৃতিশক্তি কমে যায়। কমে যায় চিন্তা করার স্বাভাবিক
ক্ষমতা। । এসব জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কোষগুলোতে কিছু ক্ষতিকর যৌগ তৈরি হয়। এ যৌগগুলো কোষের কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দেয় এবং একপর্যায়ে কোষগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে। ফলে আমরা বার্ধক্যের পথে এগিয়ে যাই। একই ব্যাপার
মস্তিষ্কের কোষগুলোতেও ঘটে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মস্তিষ্কের কোষগুলোও বুড়িয়ে যায়। হারিয়ে ফেলে তার স্বাভাবিক ক্ষমতা। আমাদের স্মৃতিশক্তি কমতে শুরু করে। এছাড়া কোনো কারণে মস্তিষ্কে স্বাভাবিক
রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে মস্তিষ্কের কোষগুলোর কর্মক্ষমতা কমে যায়। হৃদপিণ্ড থেকে শতকরা ২০ ভাগ রক্ত সরাসরি মস্তিষ্কে যায়। রক্তের কোলেস্টেরল বা অন্য কোনো কারণে ধমনীর প্রাচীর সরু হয়ে গেলে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বিঘিœত হয়। দেখা গেছে,
যারা হৃদরোগী তারা সাধারণত ভুলোমনা হয়ে থাকে। একই কারণে স্ট্রোক করলে মানুষের স্মরণশক্তি এবং চিন্তাশক্তিও দারুণভাবে কমে যায়।
তবে এ থেকে রক্ষা পাওয়ার ব্যবস্থাও আছে।
ইতিবাচক চিন্তা করুন,নেতিবাচক চিন্তা মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন। সন্দেহবাতিক মন মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি ক্ষতি করে। মনের সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগাযোগটা খুব গভীর। তাই মনের পরিচর্যা করুন। নিজেকে
নিয়োজিত রাখুন সৃষ্টিশীল কাজে।
ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করুন,ক্রোধ বা রাগ মন ও মস্তিষ্কের শত্রু। আমরা যখন রেগে যাই তখন শরীরে নিঃসৃত হয় বিশেষ এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ যা আমাদের মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি কর্মক্ষমতা কমিয়ে
দেয়।
মেডিটেশন করুন,নিয়ম করে দিনের কিছু সময় মেডিটেশন করুন। যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। সম্ভব না হলে অন্তত সকাল-সন্ধ্যা খোলা ময়দানে হাঁটুন। এ অভ্যাসগুলো মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি
কর্মক্ষমতা বাড়ায়। মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি তথ্য ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়। মূলত নির্ভর করে আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতার ওপর। মেডিটেশন আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ায়।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন,সারাক্ষণ কাজ আমাদের মস্তিষ্ককে ক্ল¬ান্ত করে তোলে। ক্লান্তি মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি কাজ করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। প্রতিদিন গড়ে ছয়-সাত ঘণ্টা
ঘুমান। দীর্ঘ কাজের ফাঁকে একটু ব্রেক দিন। কাজে মনোনিবেশ করা সহজ হবে।
বুঝেশুনে খাবার খান, বুঝেশুনে খাবার খেলে যদি ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়, হৃদযন্ত্র সচল রাখা যায় তাহলে মগজকে কেন শাণিত করা যাবে না? অবশ্যই যাবে। চাই খাদ্য সচেতনতা। এ ব্যাপারে প্রথম পরামর্শ হলো
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের ক্ষতিকর জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় উত্পন্ন ক্ষতিকর যৌগগুলোকে ভেঙ্গে ফেলে। ফলে কোষগুলো থাকে কর্মক্ষম আর তারুণ্যদীপ্ত। তাছাড়া অ্যান্টঅক্সিডেন্ট শিরা-ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়,
হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। ফলে হৃদপিণ্ড সচল, মগজটাও টনটনে। প্রাণীজ আমিষ খেয়ে শরীরে হিমোসিস্টিন নামক এক ধরনের অ্যামাইনো এসিড উত্পন্ন হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ হিমোসিস্টিন উত্পাদনের প্রক্রিয়াও বেড়ে যায়। এ
হিমোসিস্টিন ধমনীর প্রাচীরে জমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তাই মাছ-মাংস পরিমিত খাওয়াই সঙ্গত। তাহলে কী খাবেন? আগেই বলা হয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো খাবার। মূলত ভিটামিন-ই এবং সি হলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন । দুধ,সবুজO
শাক-সবজি,0কলিজা ফলমূলে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। সমপ্রতি পশ্চিমা গবেষকরা নির্দিষ্ট কিছু খাবারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করছেন। এগুলো হলো পালং শাক, ব্লুবেরি এবং স্ট্রবেরি। সয়াবিন আর রসুনের প্রতিও তারা আলাদা গুরুত্ব
দিচ্ছেন। তাদের যুক্তিটা হলো রসুন-সয়াবিন রক্তের ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ফলে ধমনীর মধ্য দিয়ে রক্ত চলাচল সুষ্ঠু হয় এবং মস্তিষ্কের কোষগুলোও সচল থাকে। বিজ্ঞানীরা ফলিক এসিডসহ ভিটামিন বি-কমপ্লেক্সের অন্যান্য
ভিটামিনের প্রতিও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন একই কারণে। বিশেষ করে হিমোসিস্টিন দূর করতে ভিটামিন বি-১২-এর জুড়ি নেই।
মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ তার মস্তিষ্ক, যা তাকে আর সব প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠ করে রেখেছে। মস্তিষ্কের তাই যতœ নেয়া চাই। মেধা, মনন, বুদ্ধি—এসবই হলো সুস্থ মস্তিষ্কের ফসল। সঠিক চিন্তা, সুস্থ জীবনাচরণ, সুষম খাবার- এ হলো সুস্থ মস্তিষ্কের
মূলমন্ত্র।
স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কার্যকারী 6 খাবার|
আপনাকে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে এমন কিছু খাবার যা আপনার ব্রেনের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ, ফলে বৃদ্ধি পাবে স্মৃতি শক্তি।প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন
জাম,লিচু,স্ট্রবেরি,কালোজাম বা আঙ্গুরের মত ফল।ফলগুলোতে রয়েছে এন্টি-অক্সিডেন্ট যা ব্রেনের কোষে অক্সিডাইস রাখে এবং ক্রমাগত ক্ষয়ে যাওয়া রোধ করে ব্রেনের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ব্লু বেরীকে ব্রেনের
জন্য সবচেয়ে কার্যকর খাবার বলে ধরা হয়, কেননা তা অ্যালজাইমার রোগ প্রতিরোধে সহযোগিতা করে ও শেখার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পুষ্টি থাকে,যা কার্যক্ষমতা বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। মস্তিষ্কে থাকা ফ্যাটি এসিডের ৪০% যা মাছের তেলে পাওয়া যায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড হিসেবে। বিশেষজ্ঞদের মতে এই
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ব্রেনের বিভিন্ন কোষের মধ্যে সংবেদন আদান-প্রদান বাড়িয়ে দেয়।
দীর্ঘদিন কফি পান করেন এমন ১৪০০ লোকের উপর চালানো গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দিনে তিন থেকে পাঁচ কাপ কফি খান করেন তাঁদের স্মৃতিভ্রংশের রোগ অনেকটাই কম হয়। এদের তুলনায় যারা দিনে দুই
কাপ কফি খান তাদের ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সে অ্যালজাইমার রোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা বেশি। ধারণা করা হয়,কফিতে থাকা ক্যাফেইন ও ব্রেনের কোষগুলোকে সুরক্ষিত করে।
ডার্ক চকলেট,যাতে অন্তত 72% কোকো থাকে, hv মস্তিষ্কের দক্ষতা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখে বলে গবেষণায় প্রমাণিত। এতে ফ্ল্যাভোনয়েড নামে এক ধরণের এন্টি-অক্সিডেন্ট যা ব্রেনের কোষকে সজীব ও
কর্মক্ষম রাখে।
দুধ থেকে তৈরি দই খেলেও ঘোল অনেকেই খান না। ঘোলে থাকে ভিটামিন বি-১২৷ এই ভিটামিনের অভাবে স্মৃতিশক্তি ভয়াবহভাবে হ্রাস পায়। ঘোলে থাকা ভিটামিন বি-১২ বয়সজনিত স্মৃতিশক্তি হ্রাস রোধ করে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় মস্তিষ্কের সংকোচন কমিয়ে দেয়।
খাদ্য তালিকায় রাখুন সবুজ শাক,-সবজি। এদের মধ্যে থাকা প্রোটেক্টিভ এন্টি-অক্সিডেন্ট মস্তিষ্ককে আরো অধিক কার্যক্ষম করে তোলে ।
বাদামে রয়েছে ভিটামিন ই, যা হল আরো একটি এন্টি-অক্সিডেন্ট। এটিকে প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় রাখলে স্মৃতিশক্তি ভালো থাকবে৷ এছাড় আমন্ড বাদামও ব্রেনেই কার্যক্ষমতা বাড়াতে বেশ উপযোগী ৷