খালেদাকে গ্রেফতার না করতে বিদেশী কোন চাপ নেই আইন মোতাবেক কাজ করছি -স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকা- তদন্ত কাজে সহযোগিতা করতে এফবিআই সদস্যরা এসেছেন। মামলার তদন্ত চলছে। এঘটনায় শুধু ফারাবী নয় আরো একজন গ্রেফতার হয়েছে। তিনি বলেন, এফবিআইয়ের সদস্যরা আমেরিকা থেকে আসেন নি। তারা ঢাকাতেই ছিলেন। তারা প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করছে তদন্তকারী টিমকে। এছাড়া খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার না করার বিষয়ে বিদেশী কোনো চাপ নেই বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিদেশী চাপে বিশ্বাস করেন না। আমরা আইন অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি।

গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে ডিআরইউ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা এবং সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত সাংবাদিকরা দেশের সমসাময়িক রাজনীতি ও বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে।
গ্রেফতারি পরোয়ানা বহাল থাকলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে তাকে গ্রেফতার না করতে বিদেশী চাপ আছে কি-না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার না করার বিষয়ে বিদেশী চাপ নেই। প্রধানমন্ত্রী বিদেশী চাপ বিশ্বাস করেন না। বিদেশী চাপে মাথা নতও করেননি। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেছেন। আমরা আইন অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে। এ পরোয়ানা আইনের প্রক্রিয়ায়  এগুচ্ছে। প্রক্রিয়া শেষে গ্রেফতারি পরোয়ানা থানায় যাবে।
ডিআরইউ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অতি সম্প্রতি সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটিত হবে। এ বিষয়ে হাইকোর্টেরও নির্দেশনা রয়েছে। অভিজিৎ রায়ের হত্যাকা-ের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ ঘটনায় ফারাবী ছাড়া আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। সন্দেহভাজন কয়েকজনকে ধরতে পারলেই মামলার সুরাহা হবে। তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকা- ঘটানো হয়েছে। খুনিরা বেশ কয়েকজন ছিল। মামলাটি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে। মামলার তদন্তে সহায়তা করছে যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তকারী সংস্থা এফবিআই (ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন)। ডিবি পুলিশ পারছে না, তাই কি এফবিআইয়ের সহায়তা নেয়া হচ্ছে? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অভিজিৎ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। সে কারণে এ মামলা তদন্তে তাদের আগ্রহ বেশি। এ কারণে তারা ডিবির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আমাদের গোয়েন্দারা ব্যর্থ হয়নি। তাদের কোন অযোগ্যতা নেই।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, অভিজিৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। বাংলাদেশে তাদের একটি ইউনিটে এফবিআই’র কয়েকজন কাজ করেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে এসেছেন এক-দু’জন। তারা তদন্তে সহযোগিতা করবেন। তাদের দেশেও আমাদের অ্যাম্বাসিতে এনএসআই রয়েছে। তারাও একইভাবে কাজ করেন।
অভিজিৎ হত্যাকা-ের সময় পুলিশের দায়িত্ব পালনে কোনো অবহেলা ছিল কি-না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, অভিজিৎ হত্যাকা-ের ঘটনায় যুগ্ম-কমিশনারসহ আরো সাতজন কাজ করছেন। পুলিশের অবহেলা থাকলে তদন্তের পর তা জানা যাবে। আসলে হত্যাকা-টি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে।
গুলি করে রাজনৈতিক নেতাকে হত্যা করা হচ্ছে, এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোনো রাজনৈতিক নেতাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে না। যশোরে বিএনপি নেতাকে না পেয়ে তার পরিবারের সদস্যদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে- এমন অভিযোগের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। যেগুলো জানানো হয় সেগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেই। বিষয়টি আমি দেখবো বলেও আশ্বাস দেন প্রতিমন্ত্রী
গোপীবাগে ছয় খুনের ঘটনা এবং নুরুল ইসলাম ফারুকীর হত্যাকা-ের ঘটনায় ডিবি পুলিশের তদন্তের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ফারুকী হত্যা মামলায় খুনিরা শনাক্ত হয়েছে। তারা দ্রুত স্থান পরিবর্তন করার কারণে ধরা পড়ছে না। খুনিরা ধরা পড়লেই হত্যার কারণ উদঘাটিত হবে। তবে ছয় খুনের বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনের নামে মানুষের ওপর পেট্রোলবোমা ও ককটেল ছোঁড়া হচ্ছে। মানুষ এসব চায় না। মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে এদেরকে হাতেনাতে ধরিয়ে পুলিশে দিচ্ছে। এ আন্দোলনে মানুষের সম্পৃক্ততা নেই। অচিরেই এগুলো বন্ধ হবে। যেসব পুলিশ সাধারণ মানুষকে আটক করে টাকা নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পেট্রোলবোমা ও ককটেল ছোঁড়ার সময় পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করলে তাদের সঙ্গে আশপাশে থাকা আরও কয়েকজনকেও ধরা হচ্ছে। পরে সম্পৃক্ততা না পেলে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। তবে যেসব পুলিশ টাকা নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
গণমাধ্যমের কর্মীদের আটকের ক্ষেত্রে পুলিশ যাতে সংযত আচরণ করে, সে ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা চাইলে তিনি বলেন, গণমাধ্যমের কর্মীরা সত্যের পেছনে ঘোরাঘুরি করেন। তাদের যাতে কোনো হয়রানি না হয় সে বিষয়টি তিনি দেখবেন।
চলমান রাজনৈতিক হরতাল-অবরোধে দেশে পেট্রোল বোমাসহ নানা সহিংসতা এক সপ্তাহের মধ্যে কমে আসার কথা বলা হলেও আবারো বেড়েছে। এ অবস্থায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আপনার মন্তব্য কী? জবাবে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ভয়াবহতা অনেক কমে গেছে, আরো কমবে। জনগণ এ ধরনের আন্দোলন চায় না। যেখানে গণমানুষের সম্পৃক্ততা নেই সেখানে আন্দোলন চলে না। সহিংসতা শিগগরিই বন্ধ হবে।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকা-ের ঘটনা উদঘাটনের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘটনা উদঘাটনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। সাগর-রুনিসহ রাজধানীর সিক্স মার্ডার এবং মাওলানা ফারুকী হত্যাকা-ের ঘটনা তদন্তে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই কেন? জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাগর-রুনি আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষ। এ হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। তবে আমরা রহস্য উদঘাটন করবোই। মাওলানা ফারুকী হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। আসামি শনাক্ত হয়েছে।
পুলিশ সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করে হয়রানি করছে, আবার উৎকোচ নিয়ে ছেড়েও দিচ্ছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, সন্দেহভাজন গ্রেফতারের সময় কেউ গ্রেফতার হতে পারেন। তবে জিজ্ঞাসাবাদের পর অভিযুক্ত প্রমাণিত না হলে ছেড়ে দেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, পুলিশ উৎকোচ নেয় না, আমি তা বলবো না। তবে যারা নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

Related posts

Leave a Comment