ভালবাসার গল্প : মায়াবতী এবং একজন নীল

মায়াবতী এবং একজন নীল

নীল আমাদের মাঝে নেই, ব্যাপারটা কোনোভাবেই মানতে পারছি না !!! আজ সারাদিন বিভিন্ন সময়ে ওর লেখা ব্লগে ও ফেসবুকের পোষ্টগুলো পড়ে কাটালাম। কঠিন কথাগুলোও কতো সুন্দর করে গুছিয়ে লিখতো ছেলেটা !! প্রতিটা লেখা অনেক চেতনাময়, আবেগময়, প্রেমময় আর প্রতিটা লেখায় ছিল মায়াবতীর জন্য মন উজার করে ভালোবাসা। লেখাগুলো আগেও পড়েছি, কিন্তু আজকে সেই সব লেখা একটা বিশাল ডায়রির মত মনে হচ্ছে । পাতায় পাতায় সযত্নে সাজানো সকাল, দুপুর, রাতের হরেক রকম সময়। কি দুর্দান্ত, কি রঙিন !! এক একটা শব্দ যেন এক একটি কবিতা কিংবা অপূর্ব কোন সুর !! অনেকটা ট্রেনের হুইসেলের মতো, বুকের ভিতর ছিঁড়ে নিয়ে যায় এমন এক সুর। ডায়রির পাতায় শুকিয়ে যাওয়া গোলাপের মতো লেপটে আছে আদর ভরা মুহূর্তগুলো। অবাক আমি একের পর এক পাতা উল্টে চলেছি । আজ পাতাগুলো যেন বিশাল মরুভূমি, শূন্য এক বিষাদ ভরে রেখেছে সবটা !! এতো সাদা লাগছিলো পাতাগুলো, এত সাদা !! মনে হচ্ছিলো সদ্য বিধবা কোন কিশোরী সব হারানোর অভিমানে মুখ গুঁজে পড়ে আছে, তার প্রিয়জন চলে গেছে অসীমে। কার উপর এতো অভিমান, জানে না কিশোরী, শুধু জানে তার জীবনের সব রঙ সাদা হয়ে গেছে…সাদা !! ঠিক ডায়রির পাতাগুলোর মতো। কিশোরীর সাদা থান হয়তো আর রঙিন হবে না, রঙিন হবে না ডায়রির পাতাগুলো। আর ট্রেন হুইসেল বাজিয়ে ছুটে যাবে না দূরে !!

নীলের হাসিটা বড্ড সুন্দর ছিলো, শিশুর মতো পবিত্র !! সৎ, ধার্মিক, সুস্থির, শান্ত অতি অসাধারন প্রতিভাবান একজন মানুষ। চাকুরীর দাসত্ব, লোভের শৃংখল আর ক্ষমতা থেকে মুক্ত থাকতে চাওয়া একজন মানুষ। নীলের মধ্যে বড় হবার সম্ভাবনা ছিল, সে কিছুই হতে পারল না। নীল ছিল ভালোবাসার কাংগাল। কাংগালের কিছু হারাবার থাকে না , তাই সাহসটা একটু বেশীই থাকে বোধহয়। এই কথাটা নীল প্রমাণ করেই ছাড়লো । যে চাওয়া কখনো পুরণ হবার নয় সেটাই স্বপ্ন। নীল স্বপ্ন দেখতো এমন এক সমাজের যেখানে মানুষের পরিচয় হবে তার মেধা , যোগ্যতা ও সততায়। সেই অধরা স্বপ্নকে ছোঁয়ার জন্য যে চেষ্টা, তার মধ্য দিয়েই সে খানিকটা মানুষ হয়ে উঠতে চেয়েছিল। নীল বিশ্বাস করতো, পরশপাথর বলে কিছু নেই। সত্যিকারের পরশপাথর বলে কিছু যদি থাকে, সেটি হলো মানুষের অন্তর। নীল বৃক্ষ হতে চেয়েছিল, বৃক্ষ হতে পেরেছে কিনা জানি না। বটগাছের মতো শিকড় ছড়িয়ে আঁকড়ে থাকতে চেয়েছিল তার প্রিয়জনদের সান্নিধ্য। সে জীবনকে স্পর্শ করতে চেয়েছিল। প্রেম-ভালোবাসা কি আসলেই এতটা ভয়ংকর !! পৃথিবী সত্যি বদলে গেছে, বদলে গেছে চিরন্তন সব অনুভুতির সংজ্ঞা। কেন্দ্রহীন বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছি কেবল আমরা। কেন্দ্র খুঁজছিও না…চলছে যেমন চলুক।

মায়াবতী শুনছো, হুম তোমাকেই বলছি…কাঁদছো? নাহ, কাঁদবে না খবরদার !! চুপ একদম চুপ। কোনো কথা নয়। আর একটি শব্দও না। একজন মানুষ তার কষ্টের মাত্রা তোমাকে জানাতে সে তার জীবন দিলো আর তারপরও এতো ভ্যাজর ভ্যাজর? একবার একটু চুপ করে মানুষটির কষ্ট অনুভব করো। এবার একটু নীরব হও। তুমি তোমার কথা বলার সময় পাবে। আজই সব শক্তি শেষ করে ফেলে গোল্ড ফিস হয়ে যেও না। কষ্টে থাকা মানুষ গুলোর পাশে কেউ একবার চুপচাপ বসে থাকলেই সেই মানুষ গুলোর কষ্ট অনেক কষ্ট কমে যায়। কিন্তু সবাই এতো বলে যে নিজের কথাই নিজেই শুনতে পায়না অন্যেরটা শুনবে কি করে। তুমি কি জানো তুমি একটা ভিতু? ভিতু মানুষরাই পৃথিবীতে অন্য মানুষকে কষ্ট দেয়। পৃথিবির কিছু মানুষ আছে তারা জন্মগত প্রচন্ড ভিতু। নিজের ভয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা বলেই হিংস্র একটি রূপ নেয়। এসব মানুষ এক অর্থে এখনো আদিম পশু। যে কোন বন্য শিকারী মাংসাশি প্রাণীর সাথে এসব মানুষের তুলনা চলে। ভয় কে নিয়ন্ত্রণ করার নামই সভ্যতা। কিসের এতো অহংকার ছিল তোমার? ঐ মানুষটার ভালোবাসায় তো কোন রকমের অহংকার ছিল না !! তুমি নাকি আমাদের একটা বন্ধুকে বলেছিলে, নীলকে নি:শেষ করা কিংবা টেনে তুলার দায়িত্ব শুধুমাত্র তোমার হাতে। সত্যি তুমি নীলকে টেনে তুলতে পারোনি, নি:শেষ করেছো। জীবনযুদ্ধে জয়ী মানুষটা নিজ ইচ্ছায় তোমার কাছে পরাজয়ী হলো, আর তুমি তাকে বলছো একটা লুজার?? তুমি তো ছিলে তার অশেষ স্বর্গ, হার মানার অবলম্বন। নিজ ইচ্ছায় হার মানা মানুষগুলো কখনো লুজার হয় না, আরেকজন কে জয়ী করেই তাদের জয়।

ভালবাসা কি খেলনা? ইচ্ছা হল খেললাম, ইচ্ছা হল ভেঙে দিলাম? রিলেশন শুরুর দুই দিন পর কেউ যদি বলে ব্রেক-আপ করে ফেলব, রিলেশন রাখবো না সেটা কি মানা যায়? রিলেশন শুরুর পর যদি এটা ভাবা হয় তাহলে দুই দিন আগে রিলেশনটা শুরু করেছিলে কেন? হয়তো স্বার্থপরের মত বলে বসলে সমস্যা একটাই ওর প্রতি ফিলিংস আসে না। অবাক লাগলো… কেমন ভালবাসা? দুই দিনে ফিলিংস চলে যায়? এটা ভালবাসার কোন রূপ? তোমাদের মত কর্পোরেট মানুষগুলোর কাছে এটাই বুঝি ভালোবাসা? একজন মানুষের সবটুকু ভালোবাসা অন্যমনস্ক জল্লাদের মত শুষে নিয়ে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে একটু বুক কাঁপে না? সত্যি কথা হচ্ছে হারিয়ে যাচ্ছি আমরা !! হারিয়ে যাচ্ছি নিজের ভিতর থেকে , নিজের মর্জি মত চলতে যেয়ে অনেক দূরে ফেলে দিচ্ছি মানবতাবোধ কে, সবাই ভাবছি, ” আমি কেন, ও চেঞ্জ হোক, ও বাদলানো শুরু করুক, ওর থেকে শুরু হোক … ব্লা ব্লা ব্লা … ”। হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলে সুখী হওয়া যায় না, কিন্তু দুর্ভগ্যবসত আমরা সারাক্ষণ সেই চেষ্টাই করি। আমরা এভাবেই প্রতারণা করছি প্রিয়জনের সাথে, আমাদের নিজের সাথেও। অন্যের সাথে প্রতারণা করে হয়ত অপরাধ বোধ হয়না আমাদের !! কিন্তু দিন শেষে আয়নায় যেন নিজেকে দেখে একরাশ থুতু ছেটানো ঘৃনা আর ধিক্কার না দিতে হয় !! দোয়া করি সবাই যেন নিজেকে শোধরাতে পারি। ভালবাসুন ভালোবাসার মত করে, পৃথিবীর সব ভালোবাসাকে জানাই ভালোবাসা।

নীল তোমার হয়তো একটা কষ্ট থেকেই গেল, বুঝার মানুষগুলো তোমাকে কখনো বুঝতে শিখেনি। কিন্তু বিশ্বাস করো তোমাকে হারিয়ে সবাই বুঝতে শিখেছে তোমার ভালোবাসার তীব্রতা । আমরা তোমার ভালোবাসার সততা নিয়ে গর্ব করি, শ্রদ্ধা জানাই গভীরভাবে। নীল তুমি যেখানে আছো, যেভাবে আছো ভালো থেকো। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভালোবাসায় ভরে থাকুক তোমার চারপাশ। তোমার ভালোবাসাকে জানাই ভালোবাসা, জানাই সম্মান।

লিখেছেন- সাদা মেঘের ভেলা

আরও ভালোবাসার গল্প

Related posts

Leave a Comment