এবার আসছে ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৪ শত টেকনোলোজি আর বিশ্ব নিয়ে!

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। আর এই ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর ফিফা ফুটবল  বিশ্বকাপ। প্রতি ৪ বছর অন্তর এই আসর নিয়মিত বসছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। শুধুমাত্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধর কারণে ১৯৪২ এবং ১৯৪৬ এই ২টি বিশ্বকাপের আসর বসেনি। প্রত্যেক আসরেই কে হবে চ্যাম্পিয়ন- এই নিয়ে ফুটবল প্রেমীদের মধ্যে থাকে টানটান উত্তেজনা। শুধু আমেরিকা, ইউরোপ কিংবা আফ্রিকা নয় বরং ফুটবল বিশ্বকাপের উত্তেজনা সারা বিশ্বের সাথে সাথে ছড়িয়ে যায় আমাদের দেশেও। এবারের ফুটবল বিশ্বকাপ ২০১৪ অনুষ্ঠিত হবে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে।

আমার এই টিউনটিতে (“টেকনোলোজি আর বিশ্বয়ে ভরপুর ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ ২০১৪! “) আমি ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ ২০১৪ ভিবিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার চেস্টা করব। প্রথমত এবারের “ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ ২০১৪”-এ যে সকল টেকনোলোজির ছুঁয়া থাকছে তা নিয়ে। এই যেমন ভ্যানিশিং স্প্রে, গোল-লাইন প্রজুক্তি এবং দ্বিতীয় ধাপে আলোচনা করব যে সকল মাঠ এবং শহরে এবারের  ফুটবল বিশ্বকাপ ২০১৪ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবং অংশ গ্রহনকারী দলের তালিকা র‍্যাংক ইত্যাদি। তৃতীয় ধাপে আলোচনা করব সাপোর্টার, ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা এবং খেলাসমূহের সময়সূচি এবং অন্নান্য! চতুর্থ ধাপে আলোচনা করব পুরুস্কার এবং বিশ্বকাপের ইতিহাস নিয়ে। এবং সব শেষের পর্বে আলোচনা করব এবারের বিশ্বকাপের মূল আকর্শন এবং কোন প্লেয়ারদের উপর থাকবে সবার নজর! তাহলে আর দেরি না করে আসুন শুরু করা যাক টেকনোলোজি দিয়েই।

  •  গোল-লাইন প্রযুক্তিঃ

এবারের বিশ্বকাপেই প্রথমবারের মত গোল-লাইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। বিগত ফুটবল বিশ্বকাপে এই গোল-লাইন প্রযুক্তির অভাব ইংল্যান্ড ফুটবল প্রেমীরা খুব ভাল মত অনুভব করেছিল। কারন জার্মানি ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার খেলায় রেফারির ভুল সিদ্ধান্তে ইংল্যান্ডের একটি গোল বাতিল হয়ে যায়। অথচ ঐ ম্যাচে ইংল্যান্ডের বল জার্মানের গোল-লাইন অতিক্রম করে কিন্ত ব্যাপারটা খুব দ্রুত এবং অস্পষ্ট হবার কারনে রেফারির ভুল সিদ্ধান্ত দেয় এবং এই ঘটনার পর ফিফা প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটারও গোল-লাইন প্রযুক্তি ব্যবহারের পক্ষে মত দেয়। তবে এর আগে ২০১২ ক্লাব বিশ্বকাপ, ২০১৩ ক্লাব বিশ্বকাপ এবং ২০১৩ কনফেডারেশন্স কাপে এই গোল লাইন প্রজুক্তি ব্যাবহার হয়। তবে এবারই প্রথমবারের মত কোন বিশ্বকাপ আসরে গোল-লাইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।

এই গোল লাইন প্রজুক্তি (বা Goal-line technology) এক ধরনের বিশেষ লেন্স এবং সফটওয়ারের মাধ্যমে তৈরি। এই গোল লাইন প্রজুক্তি আম্পায়ার কে বল গোলকির দাগ অতিক্রমের সাথে সাথেই অবগত করতে সক্ষম। ফলে ভুল হবার আর কোন সুযোগ থাকছে না এবার!

  •  ভ্যানিশিং স্প্রেঃ

গোল লাইন প্রজুক্তির মত এবারের বিশ্বকাপেই প্রথমবারের মত স্প্রে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় ফিফা। এটি এক প্রকার পানি দিয়ে তৈরি এক ধরণের স্প্রে যা ব্যবহারের এক মিনিটের মধ্যেই অদৃশ্য হয়ে যায়। খেলা চলাকালে প্রতিপক্ষ দলের জন্য ১০ গজের লাইন চিহ্নিত করতে এটি ব্যবহৃত হবে। এছাড়া, ফ্রি-কিকের স্থান চিহ্নিত করতেও রেফারিরা এটি ব্যবহার করবেন। ফলে উক্ত স্থান সমুহ সাধারন দর্শক এবং প্লেয়ারদের দৃষ্টির বাইরেই থাকবে।

  • মাঠ এবং শহর সমূহঃ

এবারের ফুটবল বিশ্বকাপ ১২টা শহরে আয়োজন হবে। নির্বাচিত বারোটি শহর ব্রাজিলের বারোটি প্রদেশের রাজধানী।  পাঁচটি শহরে বিশ্বকাপের জন্য বিশেষভাবে নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয় এবং একটি ভেঙ্গে ফেলে নতুন করে তৈরি করা হয় অপর ছয়টি স্টেডিয়ামের ব্যাপকভাবে উন্নয়ন করা হয়। এবারের বিশ্বকাপের জন্য প্রায় ৩.৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার স্টেডিয়াম প্রকল্পগুলোর পেছনে ব্যয় করা হয়েছে।

ব্রাজিল বিশ্বকাপের আয়োজক শহর বেলো অরিজন্ঠ, ব্রাজিলিয়া, কুইয়াবা, কুরিতিবা,  ফর্তালিজা,  মাসেইও, মানাউশ, নাতাল, পোর্তো আলেগ্রে, রেসিফি,  রিউ দি জানেইরু, সালভাদোর এবং সাঁউ পাউলু এবং যে ১২টি মাঠে খেলা হবে যথক্রমে তাদের নাম হচ্ছে রিউ দি জানেইরু , ব্রাজিলিয়া, সাঁউ পাউলু, ফর্তালিজা, কুইয়াবা, মানাউশ, নাতাল, কুরিতিবা, সালভাদোর, বেলো অরিজন্ঠ, পোর্তো আলেগ্রে, এবং রেসিফি।

রিউ দি জানেইরু ব্রাজিলিয়া সাঁউ পাউলু ফর্তালিজা
এস্তাদিও দো মারাকানা এস্তাদিও ন্যাশিওন্যাল মানো গারিঞ্চা[২৫] অ্যারেনা করিন্থিয়ান্স এস্তাদিও ক্যাস্তেলাও
২২°৫৪′৪৩.৮″ দক্ষিণ ৪৩°১৩′৪৮.৫৯″ পশ্চিম ১৫°৪৭′০.৬″ দক্ষিণ ৪৭°৫৩′৫৬.৯৯″ পশ্চিম ২৩°৩২′৪৩.৯১″ দক্ষিণ ৪৬°২৮′২৪.১৪″ পশ্চিম ৩°৪৮′২৬.১৬″ দক্ষিণ ৩৮°৩১′২০.৯৩″ পশ্চিম
ধারণক্ষমতা: ৭৬,৯৩৫[২৬](উন্নয়নকৃত) ধারণক্ষমতা: ৭০,০৪২[২৭](নতুন স্টেডিয়াম) ধারণক্ষমতা: ৬৮,০০০
(নতুন স্টেডিয়াম)
ধারণক্ষমতা: ৬৪,৮৪৬[২৮](উন্নয়নকৃত)
Maracana Stadium June 2013.jpg Brasilia Stadium - June 2013.jpg Arena Corinthians Drawing.png Fortaleza Arena.jpg
কুইয়াবা মানাউশ নাতাল কুরিতিবা
অ্যারেনা পান্তানাল অ্যারেনা দা আমাজনিয়া অ্যারেনা দাস দুনাস অ্যারেনা দা ব্যাইশাদ
১৫°৩৬′১১″ দক্ষিণ ৫৬°৭′১৪″ পশ্চিম ৩°৪′৫৯″ দক্ষিণ ৬০°১′৪১″ পশ্চিম ৫°৪৯′৪৪.১৮″ দক্ষিণ ৩৫°১২′৪৯.৯১″ পশ্চিম ২৫°২৬′৫৪″ দক্ষিণ ৪৯°১৬′৩৭″ পশ্চিম
ধারণক্ষমতা: ৪২,৯৬৮
(new stadium)
ধারণক্ষমতা: ৪২,৩৭৪
(new stadium)
ধারণক্ষমতা: ৪২,০৮৬
(new stadium)
ধারণক্ষমতা: ৪৩,৯৮১[৩২]
(উন্নয়নক্রিত)
Pantanal Arena March 2014.jpg Amazonia Arena.jpg Natal, Brazil - Arena das Dunas.jpg Arenadabaixada.jpg

 

  • অংশগ্রহনকারী দলের তালিকাঃ

এবারের ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ-এর চূড়ান্ত পর্বে যে ৩২টি দল অংশগ্রহন করবে তাদের নাম ও পতাকা। সাথে সাথে দলগুলোর বর্তমান র‍্যাংকিংসহ দেখানো হল।

  •  জাপান (৪৪)
  •  দক্ষিণ কোরিয়া (৫৬)
  •  আলজেরিয়া (৩২)
  •  ক্যামেরুন (৫৯)
  •  ঘানা (২৩)
  •  কোত দিভোয়ার (১৭)
  •  নাইজেরিয়া (৩৩)
  •  সুইজারল্যান্ড (৭)
  •  স্পেন (১)
  •  কোস্টা রিকা (৩১)
 

  •  হন্ডুরাস (৩৪)
  •  মেক্সিকো (২৪)
  •  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১৩)
  •  অস্ট্রেলিয়া
  •  আর্জেন্টিনা (৩)
  •  ব্রাজিল (১১) (আয়োজক)
  •  চিলি (১২)
  •  কলম্বিয়া (৪)
  •  ইকুয়েডর (২২)
  •  উরুগুয়ে (৬)
  •  বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা (১৬)
  •  ক্রোয়েশিয়া (১৮)
  •  ইংল্যান্ড (১০)
  •  ফ্রান্স (২১)
  •  জার্মানি (২)
  •  গ্রিস (১৫)
  •  ইতালি (৯)
  •  নেদারল্যান্ডস (৮)
  •  পর্তুগাল (১৪)
  •  রাশিয়া (১৯)

 

  • আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলঃ

বাংলাদেশে কিংবা বিশ্ব জুড়ে সম্ভবত ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনারই সাপোর্টার বেশী। আর্জেন্টাইন সাপোর্টারদের স্বপ্ন মেসি ভাল কিছু করবে এই ফুটবল বিশ্বকাপে এবং তাদের জন্য সুখের খবরও হচ্ছে মেসি ভালই ফর্মে আছে। অপর্দিকে এবারের বিশ্বকাপ যেহুতু ব্রাজিলে হচ্ছে তাই ব্রাজিলের জন্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বিশেষ সুযোগ থাকছে অর্থাৎ নিজেদের মাঠ নিজেদের, দেশের সাপোর্ট সাথে থাকছে পরিবার এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা! তবে সাথে  সাপোর্টদের বার্তি চাপও থাকছে ব্রাজিলের ঘাড়ে।  আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল এই দুই দল বাদেও ভাল সাপোর্টার রয়েছে  ইতালি, জার্মানি, ইংল্যান্ড, স্পেন এবং ফ্রান্সের। আমি জার্মানির সাপোর্ট করি তারপরও আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের খেলা ভালই উপভোগ করি! তবে নিজের দলের আরও কিছু মানুষ পেলে ভালই হত।

 

 

Related posts

Leave a Comment