চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার-
মাঝে মাঝে খানিকটা কৃত্রিম
আলোক। ঝিঁঝিঁ পোকার কৃত্রিম ডাক।
আর কোন সাড়াশব্দ নেই- এমন
একটা পরিবেশে অনেক দূর
থেকে শোনা গেল -“লাইট –
ক্যামেরা- অ্যাকশন”।
আমি যেখানে শুয়ে আছি সেখানে শোয়ানো আছে আমার
মত আরো তিনজন অভিনেতা।
আমি সহ মোট অভিনেতা চারজন।
এই হরর ফিল্মটার
শুটিং হচ্ছে এফডিসিতে- চার
নম্বর ফ্লোরে। আমি নতুন
অভিনেতা। এর আগে মাত্র
একটা হরর ফিল্মে অভিনয়
করেছি মাত্র- তাও একটা লাশের
ভুমিকায় মিনিট খানেক এর
অভিনয়। আমি কোন কাজ ও
পাচ্ছিলাম না মনের মত। আমি এর
আগের অভিনয়ের জন্য বেশ ভাল
একটা রোল পেয়েছিলাম। কিন্তু
গোলমাল বাঁধে একদম শেষ এ
গিয়ে। আমি ভুল
করে লম্বা একটা শর্টের একদম
শেষ তিন সেকেন্ড এর আগে শ্বাস
নিয়ে ফেলি। কেঁপে ওঠার জন্য
আমার এই শর্টটাই বাদ
দিয়েছিলেন আগের ছবির
পরিচালক- কারন এর আগে প্রায়
১০ মিনিটের শর্ট
নেইয়া হয়ে গিয়েছিল
এবং তাতে খরচ হয়ে গিয়েছিল
প্রায় দুই লাখ টাকার কাছাকাছি।
তাই আমাকে একদম
একটা বাজে মরা র পার্ট
করতে দেন করুনা করে। এই
একটা পার্টের জন্য
আমাকে বর্তমান ছবির পরিচালক
এর
কাছে ধরনা দিতে হয়েছে অনেক
বার।
হাতে পায়ে ধরে টাকা না নেবার
শর্তে আমি রাজি হই এই মরার
ভুমিকায় অভিনয় করতে। কোন
কারনে আমার ভুল
হলে টাকা দেবেন না আমাকে এই
শর্তে আমি এখন শুয়ে আছি এই
ফ্লোরের নকল স্টেজ এর
একপাশে একটা কফিনের
সাথে হেলান দিয়ে।
অনেক বার অনুরোধের পর এই রোল
আমি পেলেও এতে অনেক রিস্ক
ছিল। কারন আমার
শরীরে একটা ইঞ্জেকশন
নিতে হয়েছে আমার সকল
পেশিকে ঘণ্টা খানেক এর জন্য
অলস করে দেবার জন্য। এই
ইঞ্জেকশন নেবার পর প্রায় মিনিট
বিশেক কেটে গেছে। এর
মাঝে আমার হার্ট বিট
কমে দাড়িয়েছে মোটে ৩০ এর
ঘরে। খুব ধীরে ধীরে শ্বাস
নিচ্ছি আমি। নিচ্ছি না-
নিতে বাধ্য হচ্ছি। কারন
আমি মরার মত
পড়ে আছি চারটা ক্যামেরার
সামনে। শর্ট টেক শেষ হলে ই
আমাকে আরেকটা ইনজেক্ট করে ঠিক
করে দেয়া হবে- এমনটাই বলেছেন
ছবির পরিচালক ইসহাক সাহেব।
আমি প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম-
কিন্তু শেষে চিন্তা করলাম- অনাথ
পরিবারের সন্তান আমি – কিছু
টাকা পেলে এই
মাসটা কিছুটা শান্তিতে কেটে যাবে।
কাজটা না পেলে আমার আগের
খারাপ রেকর্ডের
কারনে আমাকে না খেয়ে থাকতে হবে প্রায়
সারা মাস। এর চেয়ে কয়েক
ঘণ্টায় হাজার দশেক
টাকা পাওয়া যাবে ভেবে এই
লাশের ভুমিকায় আমি পড়ে আছি।
দেখতে হয়তবা সত্যিকারের
লাশের মতই লাগছে আমাকে।
শর্ট টা ছিল এরকম যে কিছু লাশ
পড়ে থাকবে এদিক সেদিক।
একটা টেবিলে অনেক গুলো অস্ত্র
থাকবে- যেমন
চাপাতি ছুড়ি ইত্যাদি। এর
মাঝে একজন কসাই এসে লাশ
গুলো কাটতে শুরু করবে।
আমাকে ইসহাক সাহেব অভয়
দিয়েছিলেন এই বলে যে এই
কসাইয়ের ভুমিকায়
তিনি নিজে অভিনয় করবেন।
উনি আমাকে কথাটা বলে উপরে বেশ
গর্ভবোধ করলেও ভেতরের খবর হল
-ডামি হলেও কোন লাশের হাত
পা কাটতে কোন কেউ রাজি হয়নি।
উনার বাজেট ও এমন নেই যে কেউ
সাধে এসে রাজি হবে। আমার মতই
তিনি ও খরচ বাঁচাতে নিজেই
অভিনয় করতে যাচ্ছেন।
উপরে উপরে খুশি হলে ও ভেতর
ভেতর কেমন যেন ভয় পাচ্ছিলাম-
কারন শক্তিমান অভিনেতা শাকিল
খান পর্যন্ত এই ছবিতে অভিনয়ের
অফার ফিরিয়ে দিয়েছেন
এতে বাজেট খুব কম বলে।আর
শাকিল খানের মত অভিনেতার
কি দায়
পড়েছে যে উনি একটা কসাইয়ের
ভুমিকা করবেন- তাও সব অখ্যাত
মানুষের ভিড়ে? তাই
কাউকে রাজি করাতে না পেরে শেষে নিজেই
শুরু করলেন অভিনয় পরিচালক
ইসহাক সাহেব।
অ্যাকশন শব্দ শোনার কিছুক্ষন পর
অভিনয়ের এলাকায় প্রবেশ করল
কসাই।কিন্তু ইহসান খান
কে ছাপিয়ে গেছে কসাইয়ের
অভিনয়। আর মেকআপ এত ভাল
হয়েছে যে আমি ই
চিনতে পারছিনা। বয়স এক
লাফে ৪৫ থেকে নেমে এসেছে ২৫
এর কোঠায়। আমি আগেই
বলে রেখেছিলাম ইহসান খান
কে যে আমি লাশের ভুমিকায়
অভিনয় করলে ও চোখ
খোলা রাখবো। প্রথমে গাইগুই
করলেও পরে রাজি হন তিনি দুই
ডোজ ঔষধ ইঞ্জেকশন দেবেন এই
শর্তে। মেকআপ রুম থেকে লাশের
মেকআপ আর কস্টিউম পড়ে যখন
উনার রুমে গেলাম তখন উনি মাত্র
মেকআপ নিচ্ছেন। আমি যাওয়ার পর
তিনি নিজেই আমার
হাতে ইনজেকশন দিলেন। এটা পুশ
করা মাত্রই মনে হয়েছে আমার
শরীরের একটা পেশী ও কোন
কাজের না। সব যেন
একটা একটা করে ঘুমিয়ে পড়েছে।
সেই থেকে আমি শুয়ে আছি এই
কাঠের বাক্সের উপর।
কোনরকমে চোখ
মেলে তাকাতে পারছি। মস্তিষ্ক
কাজ করছে-কিন্তু অনেক কিছু
বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। কানে ভালই
শুনতে পারছি। বস্তুতই
একটা লাশের মত অবস্থা আমার।
তিনজন লোক আমাকে ধরে এই
খানে শুইয়ে দিয়েছে। এরপর শুরু
হয়েছে ক্লান্তিকর অপেক্ষা।
ভৌতিক পরিবেশ বেশ ভালভাবেই
জমিয়েছে ইহসান খানের স্টেজ
শিল্পীরা।
চারপাশে ধোয়া ধোয়া অন্ধকার।
একটা হালকা আলো ছড়িয়ে পড়েছে আমি সহ
তিন লাশের ডামির উপর। আর কোন
আলো ছিলনা। আর এখন
আরেকটা লালচে আলো এখন ইহসান
খানের উপর। ইহসান খানের
পোশাকটা ও সেই রকম ভয়ঙ্কর।
মনে হচ্ছে কোন এক
ইংরেজি মুভি থেকে ঊঠে এসেছেন
মৃত্যুপুরীর কসাই।বেশ পরিণত
মেকআপ। আমি ও
চিনতে পারছিনা ভাল মত।
সেটে এসেই ইপুন অভিনয় শুরু
করে দিয়েছেন। একটা টেবিলের
উপর সাজানো ছিল নানা রকম
অস্ত্র ও সরঞ্জাম। সেখান
থেকে একটা চাপাতি তুলে নিয়ে নিখাদ
কসাই এর মত ধার পরীক্ষা করলেন
চোখ দিয়ে। তারপর
টেবিলে রাখা একটা ডামি র
পায়ের নিচ দিক থেকে কাটতে শুরু
করলেন। বাহ কি নিপুন অভিনয়।
যেন ইহসান খানের জন্মই
হয়েছে কসাই এর ভুমিকায় অভিনয়
করার জন্য।
সেটে সুনসান নিরবতা। শুধু কসাই
এর একটানা থপথপ মাংস কাটার
শব্দ শোনা যাচ্ছে। টেবিলের উপর
রাখা একটা কাটা পা কে কেটে পাঁচ
টুকরা করলেন কসাই সাহেব।যে এই
হাড় বানিয়েছে তার
জুড়ি মেলা ভার।আমি দশ হাত দূর
থেকে হাড়ের সাদা অংশ আর
চুইয়ে পড়া রক্তের
মাঝে লালচে মাংস
দেখতে পাচ্ছি। আজ থেকে ইহসান
সাহেব কে এই নামেই
ডাকবো আমি। অন্তত আমি এই
অভিনয় করতে পারতাম না। একবার
ও কাট
না বলে এভাবে একটানা অভিনয়
করা সহজ কথা না।
উফ আর পারলাম না। চোখের
পাতা নবম বারের মত বন্ধ
করে আবার খুললাম আমি।
এবং সাথে সাথে ভয়ঙ্কর
ভাবে কসাই আমার দিকে তাকাল।
এই প্রথম মনে হল এই চোখ ইহসান
খানের চোখ নয়। আমি ইহসান
সাহেব কে ভালভাবেই চিনি।
ইনি ইহসান খান হতেই পারেন
না। হয়ত অভিনয়ের
আগে উনি আরেকজন
অভিনেতা পেয়ে গেছেন।
কিনবা অন্য কোন মানুষ
চলে এসেছে সেট এ। আমার
দিকে খানিক টা তাকিয়ে থপ থপ
করে আমার
সামনে এসে আমাকে পাজকোলা করে নিয়ে গেল
ফেলল বড় টেবিলটার উপর। তারপর
একটা ছুড়ি দিয়ে আমার
গায়ে পড়া টিশার্ট ছিড়ে ফেলল
দুই ভাগ করে। কথা ছিল এরপর
একটা ধামা নিয়ে কোপ দেবার
আগেই ইহসান সাহেব কাট
বলে শর্ট শেষ করবেন। কিন্তু
কসাই বাবাজি বোধহয়
ভুলে গেছে আমার টিশার্ট কাটার
সময় আস্তে করে ছুড়িতে চাপ
দেবার কথা। এত জোরে চাপ
দিয়েছে ছুড়িতে যে আমি নিজেই
বুঝতে পারছি ছুড়ির
একটা কোনা লেগে আমার বুকের
কাছটায় সৃষ্টি হয়েছে একটা লাল
দাগ। আমি বেশ ব্যাথা পেলাম।
কিন্তু এই সময় কোনভাবেই শ্বাস
নেয়া যাবেনা। তাই মরার মত
পড়ে রইলাম আমি। টিশার্ট ছিড়েই
হিংস্র একটা হাসি দিল কসাই।
শুনেই বুকের ভেতরটা দুপদুপ
করে উঠল। তারপর
একটা ধামা হাতে নিয়ে ভালমত
ধার
পরীক্ষা করে একটা হাসি দিল
সে। এবং মাথার উপর
ধামাটা ধরে কোপদিতে যাবে এমন
ভঙ্গিতে দাঁড়াল কসাই- এবং শর্ট
শেষ।
কিন্তু না-কাট শব্দটা কেউ
চিৎকার করে আগের মত বল্লনা।
কেউ কাট শব্দটা এখন ও বলছেনা।
পরিচালক যদি আমার সামনে কসাই
এর ভুমিকায় হয় তাহলে সে কেন
কাট বলছে না? সে কেন
আস্তে আস্তে ধামা নামিয়ে আনছে আমার
ডান পায়ের গোড়ালির দিকে? কেউ
কাট বলেনি –তাই
ক্যামেরা রোলিং করে চলেছে।
এবং আস্তে আস্তে ধামাটা নেমে আসছে আমার
পায়ের দিকে।
আমি বুঝতে পারছি কোন
একটা দারুন ভুল হতে চলেছে।কিন্তু
আমি মুখ নাড়াতে পারছিনা।
আমি কিছু বলে ঊঠার আগেই
ধামাটা এসে কোপ বসাল আমার
ডান পায়ে। এবং এক কোপে আমার
পায়ের একটা অংশ কেটে ফেলল
কসাই। উফ তীব্র যন্ত্রনায় আমার
মাথা থেকে পায়ের
গোড়ালি পর্যন্ত কেঁপে উঠল। আমার
হার্ট বিট বেড়ে গেল প্রচন্ড
গতিতে। রক্তের ধারায় ভিজে গেল
আমার আরেকটা পা। আমি টের
পাচ্ছি গরম তরলের অবিরাম
ধারা-বের হয়ে যাচ্ছে আমার
শরীর থেকে। কিন্তু
আমি আমি কাউকে জানাতে পারছিনা।
আস্তে আস্তে নিস্তেজ
হয়ে যাচ্ছে আমার দেহ। আমার
দিকে আরেকবার তাকিয়ে আবার
ধামা তুলে ধরল কসাই। এবার
ধামাটা এগিয়ে আসছে আমার গলার
দিকে। আমি শেষ বার নিঃশ্বাস
নিলাম প্রাণ ভরে।
ঠান্ডা বাতাসে শেষ
ছোয়া এসে ভরিয়ে দিল আমার
ছটফটে ফুসফুস …
পরদিন আবার শ্যুটিং এর সেট
ফেলা হয়েছে এফডিসির পাঁচ নম্বর
ফ্লোরে।চার নম্বর
ফ্লোরে “তুমি আমার প্রেম”
সিনেমার গানের শ্যুটিং হবে।
তাই পাঁচ নম্বর ফ্লোরে সেট
সাজানোর জন্য টিম
প্রস্তুত।“কসাই” ছবির পরিচালক
ইহসান খান
নিজে এসে বুঝিয়ে দিলেন
ডিজাইনার দের
কিভাবে সাজাতে হবে।ওদের
দেয়া হয়েছে চাপাতি, ধামা সহ
অনেক গুলো অস্ত্র। সাথে নকল
হাত ,পা, রক্ত ইত্যাদি। একটা কম
বয়সী ছেলে আজ
এসেছে এখানে সেট সাজাবার
জন্য। সে এক মনে অনেকক্ষণ
ধরে তাকিয়ে আছে একটা কাটা মাথার
দিকে। প্রথমে চিনতে পারেনি।
কিন্তু পরে চিনেছে এটা নতুন
অভিনেতা নিয়াজ মোরশেদ এর মত।
যেই বানিয়েছে অবিকল
বানিয়েছে। গতমাসে নিয়াজ
মোরশেদের সাথে প্রথম দেখা।
একটা পার্ট দেবার জন্য অনেক
ধরেছিল। তাই ইহসান খানের
কাছে নিয়ে গিয়েছিল সে। এই
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে তন্ময়
হয়ে গিয়েছিল সে- হটাত ইসহাক
সাহেবের ধমক
খেয়ে মাথাটা টেবিলের উপর
রেখে আবার কাজে মন দিল সে।
এরপর কাটা হাত
পা গুলো আংটা দিয়ে দেওয়ালের
সাথে ঝুলাতে ব্যাস্ত হয়ে গেল
সে …
আর কোন সাড়াশব্দ নেই- এমন
একটা পরিবেশে অনেক দূর
থেকে শোনা গেল -“লাইট –
ক্যামেরা- অ্যাকশন”।
আমি যেখানে শুয়ে আছি সেখানে শোয়ানো আছে আমার
মত আরো তিনজন অভিনেতা।
আমি সহ মোট অভিনেতা চারজন।
এই হরর ফিল্মটার
শুটিং হচ্ছে এফডিসিতে- চার
নম্বর ফ্লোরে। আমি নতুন
অভিনেতা। এর আগে মাত্র
একটা হরর ফিল্মে অভিনয়
করেছি মাত্র- তাও একটা লাশের
ভুমিকায় মিনিট খানেক এর
অভিনয়। আমি কোন কাজ ও
পাচ্ছিলাম না মনের মত। আমি এর
আগের অভিনয়ের জন্য বেশ ভাল
একটা রোল পেয়েছিলাম। কিন্তু
গোলমাল বাঁধে একদম শেষ এ
গিয়ে। আমি ভুল
করে লম্বা একটা শর্টের একদম
শেষ তিন সেকেন্ড এর আগে শ্বাস
নিয়ে ফেলি। কেঁপে ওঠার জন্য
আমার এই শর্টটাই বাদ
দিয়েছিলেন আগের ছবির
পরিচালক- কারন এর আগে প্রায়
১০ মিনিটের শর্ট
নেইয়া হয়ে গিয়েছিল
এবং তাতে খরচ হয়ে গিয়েছিল
প্রায় দুই লাখ টাকার কাছাকাছি।
তাই আমাকে একদম
একটা বাজে মরা র পার্ট
করতে দেন করুনা করে। এই
একটা পার্টের জন্য
আমাকে বর্তমান ছবির পরিচালক
এর
কাছে ধরনা দিতে হয়েছে অনেক
বার।
হাতে পায়ে ধরে টাকা না নেবার
শর্তে আমি রাজি হই এই মরার
ভুমিকায় অভিনয় করতে। কোন
কারনে আমার ভুল
হলে টাকা দেবেন না আমাকে এই
শর্তে আমি এখন শুয়ে আছি এই
ফ্লোরের নকল স্টেজ এর
একপাশে একটা কফিনের
সাথে হেলান দিয়ে।
অনেক বার অনুরোধের পর এই রোল
আমি পেলেও এতে অনেক রিস্ক
ছিল। কারন আমার
শরীরে একটা ইঞ্জেকশন
নিতে হয়েছে আমার সকল
পেশিকে ঘণ্টা খানেক এর জন্য
অলস করে দেবার জন্য। এই
ইঞ্জেকশন নেবার পর প্রায় মিনিট
বিশেক কেটে গেছে। এর
মাঝে আমার হার্ট বিট
কমে দাড়িয়েছে মোটে ৩০ এর
ঘরে। খুব ধীরে ধীরে শ্বাস
নিচ্ছি আমি। নিচ্ছি না-
নিতে বাধ্য হচ্ছি। কারন
আমি মরার মত
পড়ে আছি চারটা ক্যামেরার
সামনে। শর্ট টেক শেষ হলে ই
আমাকে আরেকটা ইনজেক্ট করে ঠিক
করে দেয়া হবে- এমনটাই বলেছেন
ছবির পরিচালক ইসহাক সাহেব।
আমি প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম-
কিন্তু শেষে চিন্তা করলাম- অনাথ
পরিবারের সন্তান আমি – কিছু
টাকা পেলে এই
মাসটা কিছুটা শান্তিতে কেটে যাবে।
কাজটা না পেলে আমার আগের
খারাপ রেকর্ডের
কারনে আমাকে না খেয়ে থাকতে হবে প্রায়
সারা মাস। এর চেয়ে কয়েক
ঘণ্টায় হাজার দশেক
টাকা পাওয়া যাবে ভেবে এই
লাশের ভুমিকায় আমি পড়ে আছি।
দেখতে হয়তবা সত্যিকারের
লাশের মতই লাগছে আমাকে।
শর্ট টা ছিল এরকম যে কিছু লাশ
পড়ে থাকবে এদিক সেদিক।
একটা টেবিলে অনেক গুলো অস্ত্র
থাকবে- যেমন
চাপাতি ছুড়ি ইত্যাদি। এর
মাঝে একজন কসাই এসে লাশ
গুলো কাটতে শুরু করবে।
আমাকে ইসহাক সাহেব অভয়
দিয়েছিলেন এই বলে যে এই
কসাইয়ের ভুমিকায়
তিনি নিজে অভিনয় করবেন।
উনি আমাকে কথাটা বলে উপরে বেশ
গর্ভবোধ করলেও ভেতরের খবর হল
-ডামি হলেও কোন লাশের হাত
পা কাটতে কোন কেউ রাজি হয়নি।
উনার বাজেট ও এমন নেই যে কেউ
সাধে এসে রাজি হবে। আমার মতই
তিনি ও খরচ বাঁচাতে নিজেই
অভিনয় করতে যাচ্ছেন।
উপরে উপরে খুশি হলে ও ভেতর
ভেতর কেমন যেন ভয় পাচ্ছিলাম-
কারন শক্তিমান অভিনেতা শাকিল
খান পর্যন্ত এই ছবিতে অভিনয়ের
অফার ফিরিয়ে দিয়েছেন
এতে বাজেট খুব কম বলে।আর
শাকিল খানের মত অভিনেতার
কি দায়
পড়েছে যে উনি একটা কসাইয়ের
ভুমিকা করবেন- তাও সব অখ্যাত
মানুষের ভিড়ে? তাই
কাউকে রাজি করাতে না পেরে শেষে নিজেই
শুরু করলেন অভিনয় পরিচালক
ইসহাক সাহেব।
অ্যাকশন শব্দ শোনার কিছুক্ষন পর
অভিনয়ের এলাকায় প্রবেশ করল
কসাই।কিন্তু ইহসান খান
কে ছাপিয়ে গেছে কসাইয়ের
অভিনয়। আর মেকআপ এত ভাল
হয়েছে যে আমি ই
চিনতে পারছিনা। বয়স এক
লাফে ৪৫ থেকে নেমে এসেছে ২৫
এর কোঠায়। আমি আগেই
বলে রেখেছিলাম ইহসান খান
কে যে আমি লাশের ভুমিকায়
অভিনয় করলে ও চোখ
খোলা রাখবো। প্রথমে গাইগুই
করলেও পরে রাজি হন তিনি দুই
ডোজ ঔষধ ইঞ্জেকশন দেবেন এই
শর্তে। মেকআপ রুম থেকে লাশের
মেকআপ আর কস্টিউম পড়ে যখন
উনার রুমে গেলাম তখন উনি মাত্র
মেকআপ নিচ্ছেন। আমি যাওয়ার পর
তিনি নিজেই আমার
হাতে ইনজেকশন দিলেন। এটা পুশ
করা মাত্রই মনে হয়েছে আমার
শরীরের একটা পেশী ও কোন
কাজের না। সব যেন
একটা একটা করে ঘুমিয়ে পড়েছে।
সেই থেকে আমি শুয়ে আছি এই
কাঠের বাক্সের উপর।
কোনরকমে চোখ
মেলে তাকাতে পারছি। মস্তিষ্ক
কাজ করছে-কিন্তু অনেক কিছু
বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। কানে ভালই
শুনতে পারছি। বস্তুতই
একটা লাশের মত অবস্থা আমার।
তিনজন লোক আমাকে ধরে এই
খানে শুইয়ে দিয়েছে। এরপর শুরু
হয়েছে ক্লান্তিকর অপেক্ষা।
ভৌতিক পরিবেশ বেশ ভালভাবেই
জমিয়েছে ইহসান খানের স্টেজ
শিল্পীরা।
চারপাশে ধোয়া ধোয়া অন্ধকার।
একটা হালকা আলো ছড়িয়ে পড়েছে আমি সহ
তিন লাশের ডামির উপর। আর কোন
আলো ছিলনা। আর এখন
আরেকটা লালচে আলো এখন ইহসান
খানের উপর। ইহসান খানের
পোশাকটা ও সেই রকম ভয়ঙ্কর।
মনে হচ্ছে কোন এক
ইংরেজি মুভি থেকে ঊঠে এসেছেন
মৃত্যুপুরীর কসাই।বেশ পরিণত
মেকআপ। আমি ও
চিনতে পারছিনা ভাল মত।
সেটে এসেই ইপুন অভিনয় শুরু
করে দিয়েছেন। একটা টেবিলের
উপর সাজানো ছিল নানা রকম
অস্ত্র ও সরঞ্জাম। সেখান
থেকে একটা চাপাতি তুলে নিয়ে নিখাদ
কসাই এর মত ধার পরীক্ষা করলেন
চোখ দিয়ে। তারপর
টেবিলে রাখা একটা ডামি র
পায়ের নিচ দিক থেকে কাটতে শুরু
করলেন। বাহ কি নিপুন অভিনয়।
যেন ইহসান খানের জন্মই
হয়েছে কসাই এর ভুমিকায় অভিনয়
করার জন্য।
সেটে সুনসান নিরবতা। শুধু কসাই
এর একটানা থপথপ মাংস কাটার
শব্দ শোনা যাচ্ছে। টেবিলের উপর
রাখা একটা কাটা পা কে কেটে পাঁচ
টুকরা করলেন কসাই সাহেব।যে এই
হাড় বানিয়েছে তার
জুড়ি মেলা ভার।আমি দশ হাত দূর
থেকে হাড়ের সাদা অংশ আর
চুইয়ে পড়া রক্তের
মাঝে লালচে মাংস
দেখতে পাচ্ছি। আজ থেকে ইহসান
সাহেব কে এই নামেই
ডাকবো আমি। অন্তত আমি এই
অভিনয় করতে পারতাম না। একবার
ও কাট
না বলে এভাবে একটানা অভিনয়
করা সহজ কথা না।
উফ আর পারলাম না। চোখের
পাতা নবম বারের মত বন্ধ
করে আবার খুললাম আমি।
এবং সাথে সাথে ভয়ঙ্কর
ভাবে কসাই আমার দিকে তাকাল।
এই প্রথম মনে হল এই চোখ ইহসান
খানের চোখ নয়। আমি ইহসান
সাহেব কে ভালভাবেই চিনি।
ইনি ইহসান খান হতেই পারেন
না। হয়ত অভিনয়ের
আগে উনি আরেকজন
অভিনেতা পেয়ে গেছেন।
কিনবা অন্য কোন মানুষ
চলে এসেছে সেট এ। আমার
দিকে খানিক টা তাকিয়ে থপ থপ
করে আমার
সামনে এসে আমাকে পাজকোলা করে নিয়ে গেল
ফেলল বড় টেবিলটার উপর। তারপর
একটা ছুড়ি দিয়ে আমার
গায়ে পড়া টিশার্ট ছিড়ে ফেলল
দুই ভাগ করে। কথা ছিল এরপর
একটা ধামা নিয়ে কোপ দেবার
আগেই ইহসান সাহেব কাট
বলে শর্ট শেষ করবেন। কিন্তু
কসাই বাবাজি বোধহয়
ভুলে গেছে আমার টিশার্ট কাটার
সময় আস্তে করে ছুড়িতে চাপ
দেবার কথা। এত জোরে চাপ
দিয়েছে ছুড়িতে যে আমি নিজেই
বুঝতে পারছি ছুড়ির
একটা কোনা লেগে আমার বুকের
কাছটায় সৃষ্টি হয়েছে একটা লাল
দাগ। আমি বেশ ব্যাথা পেলাম।
কিন্তু এই সময় কোনভাবেই শ্বাস
নেয়া যাবেনা। তাই মরার মত
পড়ে রইলাম আমি। টিশার্ট ছিড়েই
হিংস্র একটা হাসি দিল কসাই।
শুনেই বুকের ভেতরটা দুপদুপ
করে উঠল। তারপর
একটা ধামা হাতে নিয়ে ভালমত
ধার
পরীক্ষা করে একটা হাসি দিল
সে। এবং মাথার উপর
ধামাটা ধরে কোপদিতে যাবে এমন
ভঙ্গিতে দাঁড়াল কসাই- এবং শর্ট
শেষ।
কিন্তু না-কাট শব্দটা কেউ
চিৎকার করে আগের মত বল্লনা।
কেউ কাট শব্দটা এখন ও বলছেনা।
পরিচালক যদি আমার সামনে কসাই
এর ভুমিকায় হয় তাহলে সে কেন
কাট বলছে না? সে কেন
আস্তে আস্তে ধামা নামিয়ে আনছে আমার
ডান পায়ের গোড়ালির দিকে? কেউ
কাট বলেনি –তাই
ক্যামেরা রোলিং করে চলেছে।
এবং আস্তে আস্তে ধামাটা নেমে আসছে আমার
পায়ের দিকে।
আমি বুঝতে পারছি কোন
একটা দারুন ভুল হতে চলেছে।কিন্তু
আমি মুখ নাড়াতে পারছিনা।
আমি কিছু বলে ঊঠার আগেই
ধামাটা এসে কোপ বসাল আমার
ডান পায়ে। এবং এক কোপে আমার
পায়ের একটা অংশ কেটে ফেলল
কসাই। উফ তীব্র যন্ত্রনায় আমার
মাথা থেকে পায়ের
গোড়ালি পর্যন্ত কেঁপে উঠল। আমার
হার্ট বিট বেড়ে গেল প্রচন্ড
গতিতে। রক্তের ধারায় ভিজে গেল
আমার আরেকটা পা। আমি টের
পাচ্ছি গরম তরলের অবিরাম
ধারা-বের হয়ে যাচ্ছে আমার
শরীর থেকে। কিন্তু
আমি আমি কাউকে জানাতে পারছিনা।
আস্তে আস্তে নিস্তেজ
হয়ে যাচ্ছে আমার দেহ। আমার
দিকে আরেকবার তাকিয়ে আবার
ধামা তুলে ধরল কসাই। এবার
ধামাটা এগিয়ে আসছে আমার গলার
দিকে। আমি শেষ বার নিঃশ্বাস
নিলাম প্রাণ ভরে।
ঠান্ডা বাতাসে শেষ
ছোয়া এসে ভরিয়ে দিল আমার
ছটফটে ফুসফুস …
পরদিন আবার শ্যুটিং এর সেট
ফেলা হয়েছে এফডিসির পাঁচ নম্বর
ফ্লোরে।চার নম্বর
ফ্লোরে “তুমি আমার প্রেম”
সিনেমার গানের শ্যুটিং হবে।
তাই পাঁচ নম্বর ফ্লোরে সেট
সাজানোর জন্য টিম
প্রস্তুত।“কসাই” ছবির পরিচালক
ইহসান খান
নিজে এসে বুঝিয়ে দিলেন
ডিজাইনার দের
কিভাবে সাজাতে হবে।ওদের
দেয়া হয়েছে চাপাতি, ধামা সহ
অনেক গুলো অস্ত্র। সাথে নকল
হাত ,পা, রক্ত ইত্যাদি। একটা কম
বয়সী ছেলে আজ
এসেছে এখানে সেট সাজাবার
জন্য। সে এক মনে অনেকক্ষণ
ধরে তাকিয়ে আছে একটা কাটা মাথার
দিকে। প্রথমে চিনতে পারেনি।
কিন্তু পরে চিনেছে এটা নতুন
অভিনেতা নিয়াজ মোরশেদ এর মত।
যেই বানিয়েছে অবিকল
বানিয়েছে। গতমাসে নিয়াজ
মোরশেদের সাথে প্রথম দেখা।
একটা পার্ট দেবার জন্য অনেক
ধরেছিল। তাই ইহসান খানের
কাছে নিয়ে গিয়েছিল সে। এই
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে তন্ময়
হয়ে গিয়েছিল সে- হটাত ইসহাক
সাহেবের ধমক
খেয়ে মাথাটা টেবিলের উপর
রেখে আবার কাজে মন দিল সে।
এরপর কাটা হাত
পা গুলো আংটা দিয়ে দেওয়ালের
সাথে ঝুলাতে ব্যাস্ত হয়ে গেল
সে …