।। ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র ।।
তেলেসমাতির রহস্যের খোঁজে
মূল : এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ
ভাষান্তর : আসাদ বিন হাফিজ
উমরু দরবেশের তাঁবু থেকে দুই-আড়াই মাইল দূরে মিশরের একটি বাণিজ্য কাফেলা এসেছে। কাফেলায় মাত্র চারজন বণিক ও ছয়টা উট। কাফেলার সরদার এক বুড়ো। তার লম্বা পাকা দাড়ি, কিন্তু সুঠাম শরীর। চেহারায় ভেসে উঠেছে অভিজ্ঞতার ব্যক্তিত্বময় অভিব্যক্তি। তার এক চোখে সবুজ রংয়ের কাপড়ের পট্টি, যেন সেই চোখটি তার নষ্ট হয়ে গেছে।
মাত্র দু’রাত আগে এ কাফেলা সুদানের সীমান্ত পার হয়ে ভেতরে প্রবেশ করেছে। সুদানে গোপনে খাদ্য পাচারকারীদেরই একটি দল সেজে সীমান্ত রক্ষীদের চোখের আড়ালে সেখানে প্রবেশ করেছে তারা। সুদানে তখন খাদ্যশস্যের চরম সংকট চলছিল। সুদান সরকার তাই এসব চোরাকারবারীদের ব্যাপারে ছিল নির্লিপ্ত। এ সুযোগকেই তারা গ্রহণ করেছে।
অপরদিকে সুদান সরকার পাহাড়ী মুসলিম এলাকায় গুপ্তচর ছড়িয়ে রেখেছিল। যেহেতু পাহাড়ী মুসলমানরা সুদান সরকারের অনুগত নয়, তাই নতুন কোনো কাফেলা এলে তাদের দিকে কড়া নজর রাখার দায়িত্ব ছিল তাদের।
সরকারের এ মনোভাব জানতেন কাফেলার সরদার। তাই তিনি কাফেলাকে সতর্কভাবে এগিয়ে নিলেন। কাফেলার লোকেরা সারারাত পথ চলে ভোর বেলা উটগুলোকে টিলার মধ্যে লুকিয়ে ফেলতেন। সারাদিন টিলার আড়ালে থেকে রাত হলে আবার পথে নামতেন। এভাবেই পথ চলছেন তারা।
সীমান্ত এলাকা পেরিয়ে কাফেলা চলে এসেছে দেশের অনেক গভীরে। পথ চলার এক পর্যায়ে ভোর রাতে তারা একটি গ্রামে গিয়ে উপস্থিত হলেন। কাফেলার সরদার এক বাড়ীর সামনে গিয়ে থামলেন এবং দরজায় করাঘাত করলেন।
কিছুক্ষণ পর বাড়ীর গেট খুলে এক ব্যক্তি হাতে হ্যারিকেন নিয়ে বাইরে এলেন। কাফেলার সরদার তার কানে কানে কিছু বললেন। লোকটি তাদেরকে ‘খোশ আমদেদ’ জানিয়ে বললেন, আপনারা সবাই জলদি ভেতরে প্রবেশ করুন, উটগুলোকে আমরা হিফাজত করছি।
চারজন বণিক সে বাড়ীতে মেহমান হিসেবে প্রবেশ করলেন। বাড়ীর মালিক বাড়ীর সবাইকে জাগালেন এবং কয়েকজন পড়শীকে ডেকে পাঠালেন। পড়শীরা এলে ছয়টি উট বণ্টন করে দিলেন তাদের কাছে। তারা সেগুলো নিজেদের তত্ত্বাবধানে নিয়ে যার যার বাড়ী ফিরে গেল। কাফেলার সরদার বললেন, আপনারা উটের পিঠের মাল-সামান নামিয়ে লুকিয়ে ফেলুন।
তারা উটের পিঠের মাল-সামান নামিয়ে দেখলো – তারমধ্যে তীর ও যুদ্ধাস্ত্র ছাড়া কোনো খাদ্যশস্য নেই। তারা তীর, ধনুক, তলোয়ার, বর্শা ও খঞ্জরগুলো দ্রুত লুকিয়ে ফেললো। তিন-চার ড্রাম গোলা-বারুদ ও পেট্রোল ছিল, সেগুলোও লুকিয়ে রাখলো গোপন জায়গায়। তারপর ফিরে এলো আগের বাড়ীতে।
‘আমি কি এখন আপনাদের সামনে খোলামেলা কিছু কথা বলতে পারি?’ কাফেলার সরদার বললেন।
‘কোনো ভয় নেই, এরা সবাই আমাদের নিজস্ব লোক!’ মেজবান বললেন।
কাফেলার সরদার তার লম্বা দাড়ি খুলে ফেললেন এবং চোখ থেকে সবুজ কাপড়ের পট্টি সরিয়ে দিলেন। কৃত্রিম দাড়ি সরাতেই তার আসল সুন্দর শুশ্রুমণ্ডিত চেহারা বেরিয়ে পড়লো। একদম নতুন মানুষে পরিণত হয়ে গেলেন তিনি। মাল-সামান লুকিয়ে রেখে যারা এসে সমবেত হয়েছিল মেহমানের কাছে – তাদের এক ব্যক্তি কাফেলার সরদারকে আপন চেহারায় দেখতে পেয়ে থতমত খেয়ে গেল। সরদার হেসে বললেন, ‘আমাকে আপনারা তাহলে এতক্ষণ চিনতে পারেননি, তাই না?’
‘আলী বিন সুফিয়ান!’ লোকটি বলে উঠলো, ‘সত্যি আমি আপনাকে এতক্ষণ চিনতে পারিনি।’ তারপর লোকটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘আমাদের কী পরম সৌভাগ্য যে, আপনি নিজেই এসে গেছেন! এখানকার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। অবস্থার নাজুকতায় আমি কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছিলাম না। আপনি এসে গেছেন, এবার পরিস্থিতি সামাল দিন।’
‘হ্যাঁ, আমি বুঝতে পারছিলাম, এখানকার অবস্থা দ্রুত খারাপের দিকে যাবে।’ আলী বিন সুফিয়ান বললেন, ‘আমি যখন সংবাদ পেলাম – সুদানের কারাগারের এক প্রহরী সুদানের সামরিক বিভাগের কমান্ডারকে হত্যা করেছে, আর জানতে পারলাম – সুদান সরকার মিসরী যুদ্ধবন্দীদেরকে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চাইছে, তখনই বুঝেছিলাম, এখানে ভয়ংকর কোনো ষড়যন্ত্র দানা বেঁধে উঠছে।’
এ ছদ্মবেশী লোকটি সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ূবীর গোয়েন্দা প্রধান আলী বিন সুফিয়ান। তিনি এখন যে বাড়ীতে এসে উঠেছেন, সেটিই এখানকার মিসরীয় গোয়েন্দাদের প্রধান ঘাঁটি। বাড়ীর মালিক একজন সুদানী! সুলতান আইয়ূবীর এক বিশ্বস্ত ভক্ত।
এখানকার গোয়েন্দা প্রধান একটু পর আলী বিন সুফিয়ানকে শোনালেন এক নতুন খবর, ‘চারদিকে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে, আল্লাহর একজন দূত এসেছেন, যিনি পানিতে আগুন ধরাতে পারেন।’ বাড়ীর মালিক আলী বিন সুফিয়ানকে আরো জানালেন, ‘সেই দূত মানুষের মাঝে আজগুবী কথা বলে বেড়াচ্ছেন। আল্লাহ নাকি তাকে মৃত লাশের মধ্য থেকে উঠিয়ে এনেছেন আর তাকে বলেছেন, ‘মুসলমানদের গিয়ে বলো, তারা যেন সুদানের ভক্ত ও অনুগত হয়ে যায়। কারণ, সুদানের মাটি তোমাদের মা।’ তিনি উমরু দরবেশ সম্পর্কে সব কথা আলী বিন সুফিয়ানকে জানালেন।
‘আমার এটিই বড় ভয় ছিল, শত্রুরা এবার মুসলমানদের ঈমানের ওপর আঘাত হানবে।’ আলী বিন সুফিয়ান বললেন, ‘সে কারণেই আমি নিজে এসেছি। খৃস্টানরা ষড়যন্ত্র ও ধ্বংসাত্মক কাজের নিপুণ উস্তাদ আর আমাদের জাতি সবসময় হুজুগে মাতাল। খৃস্টানদের কথার যাদুতে মজে যায় তারা। আর এ সুযোগে আমাদের সরল-সহজ মুসলমান ভাইদের মনে সন্দেহ সৃষ্টিতে দক্ষ কারিগরের মতোই কাজ করে ওরা।
আমার জানা দরকার – এ ফিৎনার মূল কোথায়? উমরু দরবেশকে আমি ভালো মতোই চিনি। তিনি আমাদের সেনাবাহিনীর একটি ব্যাটেলিয়ানের কমান্ডার ছিলেন। তাকে কখনো দুর্বল ঈমানের লোক মনে হয়নি। সুদানীদের হাতে বন্দী হয়েছিলেন তিনি। তবুও এমন কথা তার মুখ থেকে বলার কথা নয়। সত্যি যদি তিনি এসে থাকেন এবং এসব কথা বলে থাকেন, তাহলে বুঝতে হবে – তিনি সুদানীদের ফাঁদে পা দিয়েছেন অথবা এর মধ্যে কোনো রহস্য লুকায়িত আছে। যা হোক, আমাকে এর আসল কারণ জানতে হবে।
এ অঞ্চলে মিসরের গোয়েন্দা ও কমান্ডোদের সংখ্যা নেহাত কম নয়।’ আলী বিন সুফিয়ান মেজবানকে বললেন, ‘আপনি বিশ্বস্ত গোয়েন্দা ও কমান্ডোদেরকে ডেকে আনার ব্যবস্থা করুন। এ দুষ্কর্মের সমুচিত জবাব দিতে হবে।’
সূর্য তখন উঠি উঠি করছে। গোয়েন্দা ও কমান্ডোদেরকে ডেকে আনার জন্য লোকজন ছুটলো এদিক-ওদিক। তারা বেরিয়ে যাওয়ার পর পরই এক অশ্বারোহী তীর বেগে ছুটে এসে সেই বাড়ীর সামনে থামলেন। আরোহী ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে যখন ভেতরে প্রবেশ করলেন, সবাই দাঁড়িয়ে গেল তাকে সম্মান জানাতে। এই সেই ইমাম, যিনি উমরু দরবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। লোকেরা তাঁর কথা না শুনে তাঁকে ধাক্কা দিয়ে চলে গিয়েছিল। রাতের অন্ধকারে তাঁর ওপরই আক্রমণ চালিয়েছিল দু’ব্যক্তি। ইমাম সাহেব ওদেরকে প্রতিহত করলে ওরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এ বাড়ীটি যে মিসরী গোয়েন্দাদের গোপন মিলনকেন্দ্র, এ কথা তিনি জানতেন। তাই পাহাড় থেকে ফিরে প্রথমে তিনি মসজিদে যান, সেখান থেকে বাড়ী ফিরেই চড়ে বসেন ঘোড়ার ওপর। কালবিলম্ব না করে সাথে সাথে ঘোড়া ছুটিয়ে দেন এ গ্রামের দিকে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, উমরু দরবেশের কার্যকলাপ ভিলকিবাজী ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি এখানে ছুটে এসেছেন সে কথা জানাতে এবং কী করে এ ভিলকিবাজী ও প্রতারণা বন্ধ করা যায় – সে সম্পর্কে পরামর্শ করতে।
তাকে দেখে সবাই উঠে দাঁড়ালে আলী বিন সুফিয়ানও উঠে দাঁড়ালেন। কারণ, ইমাম সাহেব ও আলী বিন সুফিয়ান কেউ কাউকে চিনতেন না।
ইমাম সাহেবকে আলী বিন সুফিয়ানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হলো। আলী বিন সুফিয়ান বললেন, ইমাম সাহেব! উমরু দরবেশ সম্পর্কে সবকিছু আমাকে খুলে বলুন। তিনি তাঁকে উমরু দরবেশের কার্যকলাপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন। কিভাবে উমরু দরবেশ লোকদেরকে সম্মোহিত করছেন, ভিলকিবাজির খেল দেখিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন, এসব খুলে বললেন।
‘সে কি আসলেই উমরু দরবেশ, নাকি তাঁর নামে অন্য কেউ এসব বলে বেড়াচ্ছে – তা কি খতিয়ে দেখেছেন?’ জানতে চাইলেন আলী বিন সুফিয়ান।
‘না, এ লোক উমরু দরবেশই। আমরা তাঁর গ্রামের বাড়ীতে লোক পাঠিয়ে খবর নিয়েছি এবং তাঁকে চেনে এমন লোক দিয়ে সনাক্ত করিয়েছি।’ ইমাম সাহেব বললেন, ‘যদি তার এ কার্যকলাপ ও প্রচার বন্ধ করা না হয়, তবে এখানকার মুসলমানরা ধ্বংস হয়ে যাবে। এ লোক নিজেকে আল্লাহর দূত দাবী করছেন। আজ রাতে উমরু দরবেশ সামনের গ্রামে ভিলকিবাজী দেখাবেন।’
ইমাম সাহেব ও উপস্থিত লোকজন এর কী বিহিত করা যায় এ নিয়ে আলোচনায় বসলেন। অধিকাংশই বললেন, ‘উমরু দরবেশকে হত্যা করা হোক।’ আলী বিন সুফিয়ান এ মতের সাথে একমত হতে পারলেন না। তিনি বললেন, ‘উমরু দরবেশকে হত্যা ছাড়াই সঠিক পথে আনা যাবে আর তার মুখ দিয়েই বলানো হবে, তিনি যা দেখিয়েছেন – তা সবই ভিলকিবাজী এবং সবই মিথ্যা! কিন্তু তাকে হত্যা করা হলে লোকেরা তাকে আরও বেশী সত্য বলে মনে করতে থাকবে।
আলী বিন সুফিয়ানের সাথে অন্য যে তিনজন বণিকের বেশে এসেছিলেন, তারা মিসর সেনাবাহিনীর পরীক্ষিত সৈনিক ও গোয়েন্দা। আলী বিন সুফিয়ান আবার আগের চেহারায় ফিরে গেলেন। এক চোখে সবুজ কাপড়ের পট্টি বাঁধলেন আর মুখে লাগালেন লম্বা পাকা দাড়ি। সঙ্গী তিনজনকে বণিকের বেশেই তৈরী হতে বলে লোকদেরকে ঘোড়া সাজাতে বললেন। আরও কয়েকজনকে বললেন, ঘোড়া ও উটে চড়ে তার পিছু নিতে। সবাই তৈরী হলে ইমাম সাহেবকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সেদিকে যাত্রা করলেন, যেখানে উমরু দরবেশ আজ রাতে তুর পাহাড়ের নূর দেখাবেন বলে প্রচার করেছেন।
জোস খুব মজার
Pore valo laglo, baki ta kothay & kobe porte parbo?
রমজান এবং অন্নান্য কিছু কাজের চাপের কারনে আমরা আমাদের ওয়েব-সাইট টি সাময়িক ভাবে আপডেট করতে পারছি না, তবে ইনশাআল্লাহ্ ঈদের পর থেকে নিয়মিত আপডেট করা হবে। ঠিক একই কারনে আপনার মন্তব্যের উত্তর দেওয়া হল না, দুঃখিত।
as-salamu alikum ,
apnara j dr.jakir naik’r bepok-khy protibadon likhen a bapary ke apnara jakir naik k tar vul gulo shomporky taky bolychen? jody boly thyken taholy theny ki bolychen?
assalamu alaikum. apnara drabahik upannas aro basi kara onubad karun.kam sa kam 2 ba 3 prista jano hoy. aroakti upannas salu karun jamon; muhammad bin kasamar jiboni//////tarik bin jiadar jiboni. allah apnather taoufik dan karunn…….
রমজান এবং অন্নান্য কিছু কাজের চাপের কারনে আমরা আমাদের ওয়েব-সাইট টি সাময়িক ভাবে আপডেট করতে পারছি না, তবে ইনশাআল্লাহ্ ঈদের পর থেকে নিয়মিত আপডেট করা হবে।
…।ঠিক একই কারনে আপনার মন্তব্যের উত্তর দেওয়া হল না, দুঃখিত।
That’s really tnikhing of the highest order